কোরআনের আলোকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দোয়া এবং আমল বাংলা অর্থ সহ উচ্চারণ
প্রিয় পাঠক আপনি যদি কোরআনের আলোকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দোয়া ও আমল বাংলা অর্থ
সহ উচ্চারণ না জেনে থাকেন তবে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।আমাদের সকলের উচিত
ইসলামিক পথে জীবণ যাপন করা।সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরে থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব
মুহুর্ত পর্যন্ত সকল কাজে দোয়া পরে শুরু করা উচিত। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক
কোরআনের আলোকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দোয়া ও আমল বাংলা অর্থ সহ উচ্চারণ জানুন।
প্রত্যেক মুসলিমদের প্রতিদিনের কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করা
অত্যন্ত জরুরী। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের প্রত্যক সন্ধ্যায়
খাবার পূর্বেও দোয়া পড়ে খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আল্লাহর নামে আমরা যে কাজে
শুরু করি না কেন সেই কাজে আল্লাহ তাআলা আমাদের বরকত দিয়ে থাকেন। তাই চলুন
আজকের এই পর্বে জেনে নেওয়া যাক কোরআনের আলোকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দোয়া
ও আমল বাংলা অর্থ সহ উচ্চারণ।
পোস্ট সুচিপত্রঃ কোরআনের আলোকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দোয়া ও আমল - বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ
- ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়বেন
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে যে দোয়া পড়বেন
- ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে যে দোয়া পড়তে হবে
- খাবার পূর্বে যে দোয়া পড়তে হয়
- খাবার খাওয়া শেষ করে যে দোয়া পড়তে হবে
- বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে যে দোয়া পড়তে হয়
- বাড়িতে প্রবেশ করার সময় যে দোয়াটি পড়তে হয়
- মসজিদে প্রবেশ করার সময় যে দোয়া টি পড়তে হয়
- শেষ কথা
ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়বেন
আমরা অনেকেই জানিনা ঘুম থেকে ওঠার পর কোন দোয়া পড়তে হয়। ঘুম থেকে উঠে যে
দোয়া পড়বেন সেই দোয়াটি জানতে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।ঘুম থেকে ওঠার
পর কি করতে হয় হাদীসে এই নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। মুমিনের কোন কাজ যখন
আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (স.) এর দেখানো পথে হয় তখন সেটি ইবাদতের পরিণত হয়ে
যায়। ঘুম থেকে উঠার দোয়া ও আমল সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন নির্দেশনা এসেছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘুম থেকে উঠে কোন দোয়া পড়তে হয়।
ঘুম থেকে উঠার দোয়া"টি হলোঃ
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের আমল - রমজান মাসের দোয়া ২০২৩
الحمد لله العظيم عيانه بعد امه عماد انا واليه النشور
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহ ইয়ানা বা'দা'মা আমাদানা ওয়া ইলাইহিন
নুশুর।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাদের মৃত করার পর পুনরায়
জীবিত করেছেন। আর তার দিকেই সবার পুনরুত্থান।(বুখারি হাদিস-৬৩২৪)
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে যে দোয়া পড়বেন
ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে অবশ্যই বিছানাটি জেনে নিতে হবে এবং ঘুমানোর সময়
ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমাতে হবে। পরবর্তীতে হযরত মুহাম্মদ (স.) যে দোয়াটি পড়ার
কথা বলেছেন তা হলোঃ
اللهم استلمت نفسي اليك والزهد واجهي اليكا و فوزت امري اليك والدته دخلني اليك قطه وراه بدا اليك لا مازدا من جواله ما ازعل منك الا اليك ماندو بيكا بيكا الذي انزلته وابي نبيك الذي ارسلت
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আস্লামতু নাফসি ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহতু ওয়াঝি ইলাইকা ওয়া
ফাউওয়াযতু আমরি ইলাইকা ওয়ালজা'তু যাহ্রি ইলাইকা রাগ্বাতা ওয়া রাহবাতান ইলাইকা
লা মালজা'আ মিনকা ওয়া লা মানজা'আ মিনকা ইল্লা ইলাইকা আ-মানতু
বিকাতা-বিকা।আল্লাজি আনঝালতা ওয়া বি নাবিয়্যিকাল্লাযি আরসালাত।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি নিজেকে তোমাতে সমর্পন করলাম। তোমার দিকে মুখ ফেরালাম,
আমার কাল তোমার প্রতি ন্যস্ত করলাম এবং তোমার প্রতি ভয় ও আগ্রহ নিয়ে তোমার
আশ্রয় গ্রহণ করলাম। তুমি ছাড়া কোন আশ্রয় স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। তোমার
প্রেরিত কোরআনের প্রতি ঈমান আনলাম এবং তোমার প্রেরিত রাসুল (স.) এর প্রতি ঈমান
আনলাম।
রাতে ঘুমাবার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘুম থেকে
জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়। ফলে শয়তান তার
নিকট আসতে পারে না। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রাতে ঘুমাবার সময় সূরা ইখলাস,
সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস পড়ে ঘুমাতেন।
ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে যে দোয়া পড়তে হবে
আমরা ঘুমের মাঝে অনেকেই ভয় পেয়ে থাকি। আমার অনেকেই রয়েছে যারা ঘুমের মাঝে
খারাপ স্বপ্ন দেখে। কেউ কেউ তো আবার ঘুমের মাঝে বোবাতে ধরে বলে বলে। আপনার
ক্ষেত্রেও যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তবে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন জেনে
নেওয়া যাক ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে কোন দোয়া পড়তে হবে সেই সম্পর্কে।
ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে যে দোয়া পড়তে হবেঃ
عاوزه بقاله سليم عمتي من قاعده هي واجابه واشعاري عباده ومن عماد اديس حياتنا وذا اي يهدرون
উচ্চারণঃ আউজুবিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মতি মিন গাদা বিহি ওয়া ইক্বা বিহি ওয়া
শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন, হামা যাতিশ শায়া ত্বিনি ওযা আই ইয়াহ দুরুন।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের অশ্লীলতার ক্রোধ ও শাস্তি থেকে তার
বান্দাদের অনিষ্ট থেকে, শয়তানের প্ররোচনা এবং আমার কাছে ওদের হাজির হওয়া থেকে
আশ্রয় প্রার্থনা করছে।(তিরমিজি)
খাবার পূর্বে যে দোয়া পড়তে হয়
بسم الله هو علي مباركه الله
উচ্চারণঃ বিস্মিল্লাহি ও'আলা বারাকাতিল্লাহ
খাবার খাওয়ার শুরুতে দোয়া পড়তে ভুলে গেলে খাবার খাওয়ার মাঝে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ
بسم الله اوله واخيرا قالها
খাবার খাওয়া শুরুর আগে তিন ভাবে বসে খাবার খেতে হয় সেগুলো হলোঃ
- উভয় হাঁটু উঠিয়ে পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে বসা
- এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে বসা
- উভয় হাটু দিশাই দিয়ে নামাজে বসে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
খাবার খাওয়া শেষ করে যে দোয়া পড়তে হবে
আমরা অনেকেই খাবার শেষ করে তাড়াহুড়া করে উঠে চলে যাই। যে কাজগুলো আমাদের মুসলিম
হিসেবে করা একদম ঠিক নয়। সব সময় যেকোনো খাবার খাওয়ার পর আল্লাহর শুকরিয়া
আদায় করতে হবে তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক খাবার খাওয়া শেষ করে কি দোয়া
পড়তে হবে।
الحمد لله الاذى امانه واسكنه اوضاع لانه مسلمين
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আত-আমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমচ
অর্থঃ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং
মুসলিম বানিয়েছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে যে দোয়া পড়তে হয়
আমরা বিভিন্ন কাজের জন্য বা কোথাও যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময়
আমাদের সকলের বাড়ি থেকে বের হওয়ার দোয়া পড়ে বের হওয়া জরুরী। আপনি যদি বাড়ি
থেকে বের হওয়ার দোয়া বাড়ি থেকে বের হন তাহলে আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগণ সবসময়
আপনার সাথেই সঙ্গী হয়ে থাকে। তাই চলুন এই পর্বে জেনে নেওয়া যাক বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে যে দোয়া পড়তে হয়।প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার প্রিয়
উম্মতকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মহান রবের উপরে ভরসা করে বের হওয়ার জন্য
পরামর্শ দিয়েছেন। দোয়াটি পড়ে বের হওয়ার পর থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত আল্লাহ
তায়ালার নিকট সুরক্ষা থাকবে। বাড়ির বাইরে জটিল ও কঠিন বিপদ আপদ থেকে বেঁচে
যাবে। চলুন যেনে নেওয়া যাক বাহিরে যাবার সময় যে দোয়াটি পড়তে হবে।
بسم الله توك تعال تو على الله ولاحول ولاقوه الا بالله
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক'কালতু আলাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কু'ওয়াতা বিল্লাহ
রাসুল বলেছেন যে ব্যাক্তি এই দোয়া পড়ে ঘড় থেকে বেরোবে সকল বিপদ থেকে সে নিরাপদে
থাকবে ও ইবলিশ শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা ।
বাড়িতে প্রবেশ করার সময় যে দোয়াটি পড়তে হয়
আমরা অনেকেই জানিনা বাড়িতে প্রবেশ করার সময় কোন দোয়াটি পড়তে হয়। আপনি যদি
বাড়িতে প্রবেশ করার সময় যে দোয়াটি পড়তে হয় জানতে চান তবে এই পর্বটি আপনার
জন্য।যেখান থেকে আসেনা কেন বাড়িতে প্রবেশ করার পর প্রথমে সালাম দিয়ে প্রবেশ
করতে হবে এবং দোয়া পড়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক বাড়িতে
প্রবেশ করার সময় কোন দোয়াটি পড়তে হয়।
بسم الله ولدنا و بسم الله هل زنا وعلى ربنا توكلنا
উচ্চারণঃবিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়াবিসমিল্লাহি খারাজনা,ওয়া' আলা রাব্বিনা
তাওয়াককালানা।
অর্থঃ আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি। আল্লাহর নামে আমরা বের হয় এবং আমাদের প্রভু
আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করি।
মসজিদে প্রবেশ করার সময় যে দোয়া টি পড়তে হয়
আমাদের সকলের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে পড়ার নির্দেশ
দিয়েছেন। তাই আমরা যখনই মসজিদে প্রবেশ করি না কেন মসজিদের প্রবেশের সময় দোয়া
পড়ে প্রবেশ করতে হয়। আপনি যদি মসজিদে প্রবেশ করার সময় যে দোয়া টি পড়তে হয়
জানতে চান তবে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয় এবং বাম পা দিয়ে
বের হতে হয়। যদি কোন ব্যক্তি অসাবধানতার কারণে ডান পা দিয়ে প্রবেশ না করে তবে
তার গুনা হবে না কিন্তু সে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে। চলুন মসজিদে প্রবেশ করার
সময় কোন দোয়া পড়তে হয় জেনে নেই।
اعوذ بالله عزين وادي وادي كريم وسلطه نهى القديمه بسم الله والصلاه والسلام على رسول الله اللهم افتح لي ابواب رحمتك
উচ্চারণঃ আ'ঊযু'বিল্লা-হিল আজিম', ওয়া বিওাজহিহিল কারীম, ওয়াসুলতা-নিহিল
ক্বদিম,মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।(বিসমিল্লাহ-হি ওয়াস সালাতু)(ওয়াসসালা-মু
'আলা রাসূলিল্লাহ-হি,) (আল্লা-হুম্মাফতাহ লী আবওয়া-বা রাহমাতিক।)
অর্থঃ আমি মহান আল্লাহর কাছে তার সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসিলায়
বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।(আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি,) সালাত
ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপর। হে আল্লাহ আপনি আমার জন্যে আপনার রহমতের দরজা সমূহ
খুলে দিন।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে এতক্ষণে নিশ্চয়ই কোরআনের আলোকে প্রতিদিনের
প্রয়োজনীয় দোয়া ও আমল বাংলা অর্থ সহ উচ্চারণ জানতে পেরেছেন। এই পর্বটি সম্পর্কে
আপনার যদি কোন মতামত থেকে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।