মাসিক বন্ধ করার ঔষধের নাম
কি খেলে মাসিক বন্ধ হবে এবং পিরিয়ড বন্ধ করার ট্যাবলেট সবথেকে ভালো কোনটি
বিস্তারিত সহ জানতে পারবেন এই পর্বের মাধ্যমে। অনেকের ক্ষেত্রে এমন হয় যে একবার
মাসিক শুরু হলে তা ভালো হতে অনেক সময় লেগে যায় যা ওষুধ বা ঘরোয়া কোন উপায়ে
ভালো হয় না। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব কি খেলে মাসিক বন্ধ হবে এবং পিরিয়ড বন্ধ
করার সবথেকে ভালো ট্যাবলেটের নাম সম্পর্কে।
অনেকের মাসিক বন্ধ না হওয়ার সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পর্বটি
অনেক উপকারে আসবে। এই পর্বের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে মাসিক বন্ধ করা
যায় এবং মাসিক বন্ধ করার ট্যাবলেট এর নাম সম্পর্কে। নিচে মাসিক বন্ধ করার
ট্যাবলেট এর নাম দেওয়া এবং উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্রঃ মাসিক বন্ধ করার ৮ টি কার্যকরী উপায়
- কি খেলে মাসিক বন্ধ হবে
- মাসিক বন্ধ করার ঔষধের নাম
- মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ
- মাসিক বন্ধ না হলে করণীয়
- মাসিক বন্ধের হোমিও ঔষধ
- মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
- শেষ কথা
কি খেলে মাসিক বন্ধ হবে
কি খেলে মাসিক বন্ধ হবে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকে বা প্রশ্ন করে থাকে।
মাসিক বন্ধ না হলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি বন্ধ না হওয়ার
কারণে চলাফেরা করতে অনেক বাধা আসে। মাসিক বন্ধ না হয় এমন একটি সমস্যা যা
লজ্জার কারণে অনেক সময় কাউকে জিজ্ঞেস করা যায় না। তাই আপনাদের সাথে আজকে
আমরা আলোচনা করব কি খেলে মাসিক বন্ধ হবে সেই সম্পর্কে। দীর্ঘ সময় ধরে
পিরিয়ডের সাথে মোকাবেলা করা একটি অস্বস্তিকর এবং কষ্টদায়ক। তাই নিচে আলোচনা
করা হলো কোন খাবারের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ করা সম্ভব সেই সম্পর্কেঃ-
আরো পড়ুনঃ জরায়ু টিউমার - জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
- পানি পান করাঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে আপনাকে ভালোমতো হাইড্রেশন থাকতে হবে। সঠিক পরিমাণের হাইড্রেশন রক্তের পরিমাণকে বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়।
-
আয়রন জাতীয় খাবারঃ পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ
হয়ে থাকে। এই সময়ে রক্তস্বল্পতা রোধ করার জন্য আয়রন জাতীয় খাবার খেতে
হবে। যেমন যতটা সম্ভব সবজি, শক্তিশালী সিরিয়াল এবং মটরশুটি অনেক কাজে
আসবে।
- ভেষজ চাঃ ভেষজ জাতীয় চা খেতে পারেন। যেমন রাস্পবেরি পাতার চা খেলে জরায়ু এর বেশি গুলোকে টন করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে থাকে।
-
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ মাসিক চলাকালীন সময়ে যত পারা যায়
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে যেমন
সাইট্রাস ফল ও স্ট্রবেরি ফলগুলো রক্তনালীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে ও
রক্তপাত কমানোর জন্য বেশ উপকারী।
-
হলুদঃ ডায়েট কন্ট্রোল করার জন্য হলুদ যোগ করা অথবা হলুদের সম্পর্ক
হিসেবে গ্রহণ প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা পিরিয়ডের অস্তিত্বের
সাহায্য করে।
-
আনারসঃ আনারসে রয়েছে এনজাইম ব্রোমেলাইন প্রদাহ বিরোধী প্রভাব
থাকে যা পিরিয়ডের লক্ষণগুলোকে উপশম করতে সাহায্য করে।
মাসিক বন্ধ করার ঔষধের নাম
তাৎক্ষণিক ভাবে মাসিক বন্ধ করার ঔষধের নাম নিচে উল্লেখ করা হবে তবে অবশ্যই
নিজের উল্লেখিত ওষুধগুলো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন। আপনার
স্বাস্থ্য পরীক্ষিত করে একজন ডাক্তার আপনাকে উপযুক্ত ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ
দিবেন। তবে আপনি মাসিক বন্ধ করার ঔষধের নাম জেনে রাখতে পারেন যেন যেকোনো সময়
বিপদে কাজে আসতে পারে। পিরিয়ড বন্ধ করার ঔষুধ এর নাম গুলো হলোঃ-
- অ্যান্টি প্রজেস্টিনঃ এই ওষুধটি মাসিক হওয়ার সময় মাসিক স্রাব বন্ধ করে এবং গর্ভাবস্থায় পরিবর্তন করে থাকে। এই ওষুধ হরমোনের প্রয়োজনীয় সম্পন্ন পরিবর্তন করে থাকে এবং পরবর্তীতে পিরিয়ড য়াসে।
- ওভার-দি-কাউন্টার কনট্রেসেপ্টিভ পিলঃ এই ওষুধটি নিয়মিত রূপে গ্রহণ করার মাধ্যমে পিরিয়ড বন্ধ করতে সাহায্য করবে। ও হরমোন নির্গত করে এবং তার ফলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।
- ইভাস্ট্যাট ৫০০ এমজি(Evastat 500mg): সচারচর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ করার জন্য নির্ধারিত হয়। এই ওষুধটি অ্যান্টিফিবিনোলাইটিক হিসেবে কাজ করে থাকে এবং রক্তের ক্লোট গুলো খুব দ্রুত বিচ্ছিন্ন হতে বাধা দিয়ে থাকে।
মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ
মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ অনেক থাকতে পারে। এই পর্বের মাধ্যমে আপনারা সব
কারণগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন। মাসিক বন্ধ না হওয়ার কিছু কারণ
নিচে উল্লেখ করা হলো। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সাধারণত মাসিক চক্র
শুরু হওয়ার ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। যদি কোন কারণে সাতদিনের
বেশি স্থায়ী হয় তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
বিভিন্ন কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সাধারণ মাসিক চক্র বন্ধ না হতে পারে।
কারণগুলো হলোঃ-
গর্ভজনিত সমস্যা
আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং গর্ভকালীন সময়ে আপনার ব্লিডিং শুরু হয়
অর্থাৎ মাসিক এর মত রক্ত যেতে থাকে তবে অবশ্যই অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
হরমোন জনিত সমস্যা
যাদের হরমোন জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের দীর্ঘদিন যাবত মাসিক চক্র চলতে পারে।
ইষ্টোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের অস্বাভাবিকতার কারণে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি
হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
জরায়ুতে সিস্ট
জরায়ুতে যদি ছোট ছোট সিস্ট বা পানি থলি সৃষ্টি তৈরি হয়ে থাকে তাহলে এ ধরনের
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইউটেরাস ফাইব্রয়েড
যদি ইউটেরাস এর অভ্যন্তরে ফাইব্রয়েড বা পলিপ তৈরি হয়ে থাকে তবে এ ধরনের
সমস্যা দেখা দিতে পারে
জরায়ুতে টিউমার
জরায়ুতে কোন প্রকার টিউমার সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে
অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল অনিয়ন্তিত মাসিক চক্র।
নন হরমোনাল ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস
শরীরের অভ্যন্তরে নন হরমোনাল ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস প্রবেশ করালে এ ধরনের
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভপাত
অনেক সময় গর্ভপাতের পরে হেবি ব্লিডিং হতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে
রোগীকে ভর্তি করাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে
হবে।
মাসিক বন্ধ না হলে করণীয়
মাসিক বন্ধ না হলে করণীয় কি জানতে চাচ্ছেন? হ্যাঁ আপনি সঠিক জায়গায়
এসেছেন। এই পর্বের মাধ্যমে চলুন জেনে নেওয়া যাক মাসিক বন্ধ না হলে করণীয়
কি সেই সম্পর্কে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্বাভাবিক মাসিক চক্র
তিন থেকে সাত দিন। যদি সাত দিনের পরেও মাসিক চক্র বন্ধ না হয় তবে যত দ্রুত
সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
অনিয়ন্ত্রিত মাসিক চক্রও বন্ধ করতে সাহায্যকারী খাবার।
পেঁপে
পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং সহজলভ্য পেঁপে খুবই উপকারী। যদি আপনি অনিয়ন্তিত মাসিক
চক্রে ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত পেঁপে এই সমস্যা থেকে আপনাকে খুব সহজেই মুক্তি
দিতে পারে। কারণ কাঁচা বাধা পাকা পেঁপেতে যে কস থাকে সেটি আপনার জরায়ুকে
সংকুচিত করতে সাহায্য করে। যার ফলে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব কমে যায়।
অ্যালোভেরা
নিয়মিত অ্যালোভেরার রস খেলে অতিরিক্ত পরিমাণ ঋতুস্রাব কমে যায় এবং খুব
দ্রুত এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত কিছুদিন
এলোভেরার রস খাওয়া উচিত।
আদার রস
যদি অধিক মাত্রায় মাসিক ঋতুৎস্রাবের সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনি আদার রস খেতে
পারেন। এছাড়াও আদা কুচি করে পানির সঙ্গে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
লেবুর রস
নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে লেবুর রস খেলে অনিয়ন্তিত মাসিক সমস্যা দূর করে
এতে সাহায্য করে। এবং খুব দ্রুত সমস্যা থেকে সমাধান মেলে।
কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদের রস অনিয়ন্তিত মাসিক চক্রের সময় কিছুদিন খেলে প্রচুর উপকার
পাওয়া যায়।
মাসিক বন্ধের হোমিও ঔষধ
স্বাভাবিকের থেকে দীর্ঘদিন যদি মাসিক চক্র চলতে থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে হোমিও ঔষধ খুবই
কার্যকরী। মাসিক বন্ধ হওয়ার জন্য বা পিরিয়ড বন্ধের জন্য আপনি হোমিও ওষুধ
সেবন করতে পারেন। মাসিক বন্ধের হোমিও ঔষধ গুলো অনেক কাজে আসে। পিরিয়ড বন্ধের
হোমিও ঔষধ এর নাম নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-
ক্যালকেরিয়া ফল
কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় মাসিক ঋতুস্রাব হয় তবে
তাদেরকে ক্যালকেরিয়া ফলের রস দেওয়া হয় এটি খুবই উপকারী এবং কার্যকরী।
লেচেসিস
অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ করতে সাধারণত ডাক্তারগণ যে সমস্ত ঔষধ গুলো প্রয়োগ করে
থাকেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম লেচেসিস। এটি খুবই কার্যকরী।
সেপিয়া
যে সমস্ত নারীদের একই মাসে দুইবার বা এর অধিক পরিমাণ মাত্রায় ঋতুস্রাব দেখা
দেয় তাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী ঔষধ।
সিকেল কর্ণটা
হোমোপ্যাথি ঔষধের যে সমস্ত ঔষধ মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ করতে সাহায্য করে তার
মধ্যে অন্যতম হলো কর্ণতা।
পালসেটিলা
অতিরিক্ত মাত্রায় ঋতু স্রাব বন্ধ করতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তবে এটি গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।
মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় প্রত্যেক মেয়েদের জানা উচিত। কেননা পিরিয়ড
হওয়ার পরে ওষুধ নাও থাকতে পারে। তাই আপনি যদি পিরিয়ড বন্ধ করার ঘরোয়া
উপায় গুলো জেনে রাখেন তাহলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ করতে পারবেন। তাই চলুন এই
পড়বে জেনে নেওয়া যাক মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় গুলো।
- কাঁচা পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপে মাসিক রেগুলেশনের সাহায্য করে এবং জরায়ুর মাসল ফাইবার কন্টাকসনের জন্য সাহায্য করে ও কয়েক মাস নিয়মিত কাজের রস খেলে মাসিক হয় তবে মাসিক চলাকালীন এটি না খাওয়াই ভালো।
-
কাঁচা হলুদঃ হলুদ এক ধরনের মসলা জাতীয় দ্রব্য হলেও প্রাচীন থেকে
চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অনেক রয়েছে। কাঁচা হলুদ নিয়মিত করতে এবং
শরীরের হরমোন ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
-
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে বছর পরিমাণে আয়রন
সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কেননা রক্তক্ষরণের ফলে সৃষ্ট রক্তস্বল্পতা রোধ করতে
সহায়তা করে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো।
-
তাপ থেরাপিঃ তলপেটে হেটিং প্যাড বা উষ্ণ সংকোচ প্রয়োগ করার ফলে
পিরিয়ডের ক্যাম্পগুলোকে সহজ করে এবং আরাম দিতে সহায়তা করবে।
-
স্ট্রেস কমানোঃ যোগ্য ব্যায়ামের মতো শিথিল করন এবং কৌশল গুলোকে
নিযুক্ত থাকা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। যা পিরিয়ডের ইতিবাচকভাবে
প্রভাবিত হয়।
শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চয়ই মাসিক বন্ধ করার ঔষধের নাম এবং মাসিক
বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আপনি যদি এই পর্বের
মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার কাছের বান্ধবীদের সাথে শেয়ার করে
সবাইকে জানার সুযোগ করে দিবেন।