সহজ পদ্ধতিতে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি
শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আপনি নিজেই বাড়িতে বা আশেপাশে শসা চাষ করতে পারেন। বর্তমানে অনেকেই হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি জানতে চাই। আপনার বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা জমিতে শসা চাষ করে সহজ ভাবে ব্যাপক ফলন পেতে পারেন। সহজ ভাবে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি আপনি জানতে পারবেন এই পর্বের মাধ্যমে। বর্তমানে অনেকেই শসা চাষ করে সফলতা পেয়েছে।আপনার বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা জমিতে সহজেই শসা চাষ পদ্ধতি জেনে শসা চাষ করে শসা সফল হতে পারেন। এই পর্বে আপনাকে সাহায্য করবো আমরা শসা চাষ কিভাবে করবেন সেই বিষয়ে। হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি কিভাবে অধিক ফসল ফলাবেন জেনে নিন।
সূচিপত্রঃ সহজে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি
- হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি
- মাটিতে শসা চাষ পদ্ধতি
- শসা চাষে প্রয়োজনীয় সার
- শসা চাষে কীটনাশক
- শীতকালীন শসা চাষ পদ্ধতি
- শসা বীজ রোপনের পদ্ধতি
- শসা চাষের উপযুক্ত সময়
- শেষ কথা
হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি
কিভাবে হাইব্রিড শসা চাষ করে অধিক ফসল ফলানো যায় তাই নিয়েই আজকের পর্ব। এই পর্বে আলোচনা করা হবে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতির সকল নিয়ম সম্পর্কে। হাইব্রিড শসা চাষ করা হয় মাটির জলবায়ু, বীজ বপনের উপযুক্ত সময়, জমি নির্বাচন এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে। হাইব্রিড শসা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
মাটি ও জলবায়ু
শশা চাষের উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো দিনে ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং রাতের বেলায় আঠারো থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রার তারতম লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত কম তাপমাত্রা বা অতিরিক্ত বেশি তাপমাত্রা ভালো শসা ফলনের জন্য অনুকূল নয়। মেঘলা আবহাওয়া শসার জন্য উপযুক্ত নয়। উপযুক্ত জৈব পদার্থ যুক্ত এটেল দোআঁশ ও দোআশ মাটি সব থেকে বেশি উপযুক্ত।
বীজের পরিমাণ
শসা চাষের ক্ষেত্রে প্রতি এক এ করে বীজ বপনের হাড় 200 থেকে ৩০০ গ্রাম।
বীজ বপণের উপযুক্ত সময়
বছরের যে কোন সময়ে শসা চাষ করা যায়। তবে তীব্র শীতে এবং অতিরিক্ত মেঘলা আবহাওয়া শসার জন্য উপযুক্ত নয়। এছাড়াও শীতে গাছের বৃদ্ধি কম হয়। এ সময় শসার ফলন অনেক অংশে কমে যায়।
জমি নির্বাচন
শেষ দেওয়া এবং পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পৌঁছায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। প্রথমেই জমিতে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটির আলগা করে দিতে হবে যাতে শসার শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধি হয়।
বীজ বপণের পদ্ধতি
বীজ বপনের ২৪ ঘন্টা পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদ গোম খুব দ্রুত এবং ভালো হয়। বীজ ভবনের ক্ষেত্রে একটি মাদা থেকে অন্য মাদার দূরত্ব ২ মিটার হতে হবে। দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার গভীরে প্রত্যেকটি মাধাই দুইটি করে বীজ বপন করা উত্তম। চারা গজানোর সাত দিনের মধ্যে সুস্থ চারাটি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে মাচায় শসা চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত উত্তম।
মাটিতে শসা চাষ পদ্ধতি
সকল ধরনের মাটিতে শসা ভালো নাও হতে পারে। কেননা শসা চাষ করার জন্য প্রথমে মাটি নির্বাচন করে নেয়া উত্তম। মাটিতে শসা চাষ করার পূর্বে অবশ্যই মাটি শসা চাষের উপযুক্ত করে নিতে হবে। মাটিতে শসা চাষের উপযুক্ত না করে নিলে শসার ভালো ফলন আশা করা যাবে না। তাই আপনাকে অবশ্যই মাটিতে শসা চাষ পদ্ধতি জানতে হবে। মাটিতে শসা চাষ পদ্ধতি জেনে শসা চাষ করাই উত্তম।
শসা চাষের প্রথমেই মাটি তৈরি করে নিতে হবে। উপযুক্ত মাটি শসা চাষের জন্য অনুকূল। মাটির প্রকার অনুযায়ী চার থেকে ছয়টি চাষ ও মই দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রথম চাষ অত্যন্ত গভীর হওয়া প্রয়োজন। ফলাফলের জন্য বেড বা নালা পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন। এতে জমিতে শেষ প্রদান ও পানি নিষ্কাশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত উপায়ে জমি তৈরি করলে পরিচর্যা করা এবং সেচের পানির অপচয় কম হয়। শেষ চাষের সময় সার প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরী। একটি চারা থেকে ওপর চারা দূরত্ব কমপক্ষে ৬০ ইঞ্চি হতে হবে।
শসা চাষে প্রয়োজনীয় সার
কীটনাশকের দোকানে অনেক ধরনের সার পাওয়া গেলেও সকল ধরনের সার আপনি শসা গাছের প্রয়োগ করতে পারবেন না। অবশ্যই আপনাকে জেনে শুনে শসা গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে তা না হলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। শসা চাষে প্রয়োজনীয় সার গুলোই শুধুমাত্র ব্যবহার করতে পারবেন। শসা চাষে প্রয়োজনীয় সার গুলো কি কি এবং কতটুকু ব্যবহার করতে পারবেন নিচে দেওয়া হলঃ
প্রতি শতকে সারের পরিমাণ -
- গোবর সার ২০ কেজি
- টিএসপি 400 গ্রাম
- এমও পি ২০০ গ্রাম
- জিপসাম ২০০ গ্রাম
- ইউরিয়া ৩২০ গ্রাম
- দস্তা ৪৮ গ্রাম
- বোরন ৪০ গ্রাম
শসা চাষে কীটনাশক
শসা চাষে কীটনাশক অবশ্যই পরিমাণ মতো ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি কীটনাশক পরিমাণ মতো ব্যবহার না করে অধিক পরিমাণ প্রয়োগ করেন তাহলে শশা গাছ মরে যাবে। তাই অবশ্যই কীটনাশক প্রয়োগ করার পূর্বে পরিমাণ জানতে হবে। শসা চাষে কীটনাশক পরিমাণ মতো ব্যবহার করার ফলে অধিক পরিমাণ ফলন পেতে পারেন। শশাই রেড পামকিন বিটল, মাছি, সুরঙ্গ কারি পোকা, টোবাকো ক্যাটারপিলার সাদামাছি ও জব পোকা আক্রমণ করে থাকে। এক্ষেত্রে যে ধরনের কীটনাশক গুলো ব্যবহার করা যায়। সেগুলো হল-
- সাইপারমেট্রিন(২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে 10 থেকে 12 দিন পর পর)
- ইমিডা ক্লোরোপিড(সাত থেকে দশ মিনিট লিটার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে দশ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে)।
শীতকালীন শসা চাষ পদ্ধতি
সব ঋতুতে শসা চাষ পদ্ধতি এক নয়। একেক ঋতুতে ফসল এক এক ভাবে তৈরি করতে হয়। শীতকালীন শসা চাষ পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা এই সময় মাটির উর্বরতা এবং আবহাওয়া এক থাকেনা। শীতকালীন শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হবে। শশা চাষের উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো দিনে ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং রাতের বেলায় আঠারো থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রার তারতম লক্ষ্য করা যায়।
অতিরিক্ত কম তাপমাত্রা বা অতিরিক্ত বেশি তাপমাত্রা ভালো শসা ফলনের জন্য অনুকূল নয়। মেঘলা আবহাওয়া শসার জন্য উপযুক্ত নয়। উপযুক্ত জৈব পদার্থ যুক্ত এটেল দোআঁশ ও দোআশ মাটি সব থেকে বেশি উপযুক্ত। তবে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার জন্য চারার সঠিকভাবে রোপন করা অত্যন্ত জরুরী। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বা নভেম্বরের শুরুতে শীতের প্রবণতা কিছুটা কম থাকে আপনি চাইলে এই সময়ে শশা চাষ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি চারা থেকে ওপর চারা দূরত্ব ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি দূরত্ব রাখতে হবে।
শসা বীজ রোপনের পদ্ধতি
যেকোনো ফসল চাষ করার পূর্বে সবথেকে জরুরি কাজ হল বীজ রোপন করা। আপনি যদি সঠিকভাবে বীজ রোপন করতে না পারেন তাহলে ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। শসা বীজ রোপনের পদ্ধতি যদি আপনি না জেনে থাকেন তাহলে ভালো মানের শসা উৎপাদন করতে আপনি পারবেন না। তাই শসা চাষ করার পূর্বে অবশ্যই শসা বীজ রোপনের পদ্ধতি জেনে নেবেন।
বীজ বপনের ২৪ ঘন্টা পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদ গোম খুব দ্রুত এবং ভালো হয়। বীজ ভবনের ক্ষেত্রে একটি মাদা থেকে অন্য মাদার দূরত্ব ২ মিটার হতে হবে। দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার গভীরে প্রত্যেকটি মাধাই দুইটি করে বীজ বপন করা উত্তম। চারা গজানোর সাত দিনের মধ্যে সুস্থ চারাটি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে মাচায় শসা চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত উত্তম।
শসা চাষের উপযুক্ত সময়
শসা চাষের উপযুক্ত সময় রয়েছে। যে সময়ে শসা চাষ করলে আপনি অধিক পরিমাণে ফলন ফলাতে পারবেন। সব সময় শসার উৎপাদন বেশি নাও হতে পারে। এই ধরনের ফসলগুলো আবহাওয়ার ওপরে কিছুটা নির্ভরশীল হয়ে থাকে। শসা চাষের উপযুক্ত সময় থাকে যে সময়ে শসা অধিক পরিমাণে উৎপাদন হয়। শশা চাষের উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো দিনে ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং রাতের বেলায় আঠারো থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রার তারতম লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত কম তাপমাত্রা বা অতিরিক্ত বেশি তাপমাত্রা ভালো শসা ফলনের জন্য অনুকূল নয়। মেঘলা আবহাওয়া শসার জন্য উপযুক্ত নয়।
শেষ কথা
উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি হাইব্রিড শসা চাষ করতে পারেন। উপরের হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি তে আপনি যদি শসা চাষ করেন তাহলে আপনি অধিক ফলন পাবেন আশা করা যায়। শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে অথবা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। শসা চাষ পদ্ধতি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।